১. রমজানের স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ করুন
অনেকে ইফতারে তেহেরি, বিরিয়ানি জাতীয় খাবার খেয়ে থাকেন। ইফতারে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে চাইলে অবশ্যই তেল সমৃদ্ধ ও ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার বর্জন করতে হবে। তাছাড়া অতিরিক্ত মিষ্টি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার না খাওয়াই ভালো। কারণ এইগুলো পেট গরম করে, ফলে নানা রকমের পেটের অসুখ দেখা দেয়। খেজুর, দই, কলা, ফলের শরবত ইত্যাদি স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন।
২. ইফতারে রাখুন খেজুর ও ছোলা
ছোলা : দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার পর ছোলা খেলে তা শক্তি পূরণের সাহায্য করে, উচ্চ ফাইবার ও ক্যালোরি সমৃদ্ধ হওয়ায় হজমেও সহায়ক এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
খেজুর: খেজুর দিয়ে ইফতার শুরু করুন- খেজুর খেয়ে রোজা ভাঙ্গা রমজানের একটি পরম্পরা। খেজুর ইফতারের জন্য ভালো এবং উপকারি। এতে প্রাকৃতিক শর্করা, ফাইবার, এবং মিনারেলস যেমন পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, এবং কপার থাকে। এছাড়া ও খেজুরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর, ফাইবার সমৃদ্ধ খেজুর শরীরের ক্লান্তি ভাব দূর করে হজম শক্তি বাড়ায় কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং উচ্চরক্তচাপ কমায়।
৩. ইফতারে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার
আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই ইফতারে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলমূল রাখুন। দীর্ঘক্ষণ বাতাসের সংস্পর্শে থাকার ফলে ভিটামিন সি কিছুটা নষ্ট হয়ে যায়। তাই ইফতারের অনেক আগে ফল না কেটে, খাওয়ার কিছুক্ষণ আগে কেটে খেয়ে নিন। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার হলো, লেবু, কমলা, আমলকি, পেয়ারা, আমড়া, ও সবুজ সতেজ ফলমূল।
৪. হমজের সমস্যা প্রতিরোধের সমাধান
রমজানে দীর্ঘক্ষণ ধরে না খেয়ে থাকার ফলে ইফতারে সময় অনেকেই তাড়াহুড়ো করে খাবার খাই। কিন্তু তাড়াহুড়ো করে খাবার খাওয়ার ফলে আমাদের হজমের সমস্যা হতে পারে। তাই হজমের সমস্যা প্রতিরোধ করতে খাবার ধীরে ধীরে চিবিয়ে খেতে হবে।
✓ লেবু ও আদার শরবত: আদা-পানি রোজায় গ্যাসের সমস্যা দূর করে। দুইটি লেবু, আদার রস
২ টেবিল চামচ, পুদিনা পাতা কুচি ২ টেবিল চামচ। এবার উপাদানগুলো দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন। পানীয়টি আপনার পানিশূন্যতা রোধ করার পাশাপাশি হজমশক্তি বাড়াতে সহযোগিতা করবে। তবে এতে কোন চিনি ব্যবহার করবেন না।
৫. ইফতারে উৎকৃষ্ট পানীয়
ইফতারে পানীয় হিসেবে ঘরে তৈরি তাজা ফলে শরবত, ডাবের পানি, তোকমা, ইসবগুল ইত্যাদি গ্রহণ করা যেতে পারে। যা শরীরের লবণ পানির ভারসাম্য (ইলেক্ট্রোলাইট) ঠিক রাখতে সহায়তা করবে ও কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধের সহায়তা করবে। তাছাড়া এই গরমে রোজা রেখে ইফতারে তরমুজ মেটাতে পারে পানির চাহিদা। এর ৯২ শতাংশ পানি হওয়ায় এটি এই গরমে রোজার পরে শরীরের চাহিদা পূরণ করতে পারে। তরমুজ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহয়তা করে ও কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
৬. ইফতারে গ্রহণযোগ্য ও পরিহারকৃত খাদ্য
যারা সব সময় সতেজ ও প্রাণবন্ত থাকতে চান, তারা ইফতারে ভাজা-পোড়া খাবার এড়িয়ে চলুন। তাদের জন্য সমাধান হচ্ছে ইফতারে পরিমাণ মতো খাওয়া। মুড়ি, পেঁয়াজু, জিলাপি, বেগুনি, ট্যাং, কাবাব, আলুর চপ ইত্যাদির পরিবর্তে ইফতারে বেছে নিতে হবে তাজা ফল, সবজি, ফল বা সবজির সালাদ বা ফলের রস, অল্প ছোলা, দই, চিড়া-কলা, খেজুর।
এছাড়া গরমে সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার বিকল্প নেই। সেক্ষেত্রে দইচিড়া হতে পারে উত্তম খাবার। চিড়া পেট ঠান্ডা করে, পানির অভাব পূরণ করে এবং একইসঙ্গে ক্ষুধাও মেটায়। এ ছাড়াও দইয়ে থাকা প্রাবায়োটিক যা অন্ত্রে থাকা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। দই-চিড়া এমন একটি খাবার, যা দ্রুত হজম হয়। ইফতারে এ খাবারটি খেলে শরীর নানাভাবে উপকৃত হয়ে থাকে।
৭. খাবারের মেনুতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার যুক্ত করুন এবং ট্রান্স ফ্যাট পরিহার করুন
ইফতারিতে হালকা তেলে ভাজা খাবার মাঝে মাঝে গ্রহণ করা যেতে পারে, তবে সেটি যেন বারবার তেলে গরম করা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বার বার তেল গরম করলে সেটাতে ট্রান্স ফ্যাট তৈরি হয় যা অস্বাস্থ্যকর ও মারাত্মক ক্ষতিকর। সেহরিতে সামর্থ্য অনুযায়ী চেষ্টা করতে হবে ফাইবার জাতীয় খাবার খাওয়া যেমন- লাল চাল, লাল আটা, শাক-সবজি, বিচি জাতীয় শস্য- শিম, মটরশুটি ইত্যাদি। ফাইবার জাতীয় খাবার ধীরে হজম হয়। ফলে ক্ষুদা কম অনুভব হয় এবং পর্যাপ্ত শক্তি পাওয়া যায়।
৮. সেহরি
অবশ্যই সেহরি খেয়ে রোজা রাখুন। তবে সেহেরিতে তেহারি, খিচুড়ি, বিরিয়ানি ইত্যাদি সেহেরিতে না খাওয়াই ভালো। এসব খাবার হজম হতে দেহে প্রচুর পানি পরিশোষিত হয় যা রোজাদারকে তৃষ্ণার্ত করবে।
রোজায় এক্সট্রা ক্যালরি পেতে আপনার ইফতার ও সেহরিতে হালিম যুক্ত করুন। হালিমে আছে প্রোটিন (মিক্সড ডাল, মাংস) যা আপনাকে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি সারাদিনের পুষ্টি ঘাটতি পূরণ করতে সহজতা করবে।
৯/ ইফতারে পর থেকে সেহরি পর্যন্ত
ইফতারের সময় থেকে শুরু করে সেহরি পর্যন্ত আমাদের খাবারের সময়। এই সময় প্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস পানি বা তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করুন এর মধ্যে চা, কফি, যতটা সম্ভব কম পান করুন। সবজি বা সবজির সুপ, ফালুদা, দই, ফলের রস, জুস বা অন্যান্য স্বাস্থ্যকর পানীয় গ্রহণ করুন। তবে অবশ্যই কোমল পানীয় এড়িয়ে চলুন।
১০/ রোজায় শরীরচর্চার ও ব্যায়াম
রোজায় সুস্থতা পালনে শরীর চর্চার সঠিক সময় হচ্ছে ইফতারের ঠিক আগে। তাই ইফতারের ঘণ্টা দুয়েক আগে নিজের শরীর সতেজ রাখতে করুন হালকা ব্যায়াম বা যোগ ব্যায়াম। কম শারীরিক পরিশ্রম লাগে, কিন্তু উপকারী- এমন অ্যাকটিভিটিস বেছে নিন। যেমন- আধা ঘণ্টা করে নিয়মিত সময়ে হাঁটাহাঁটি করা। রোজায় ভারী ব্যায়ামের প্রয়োজন নেই। এতে করে আপনার শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে এবং পরবর্তী কিছু দিনের রুটিনে ব্যায়ামে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। তাই রুটিন বজায় রাখার জন্য যতটুকু ব্যায়াম করা যায়, তা করে যান। যদি ব্যায়ামরত অবস্থায় মাথা ব্যথা করে, অথবা দুর্বল অনুভব করতে থাকেন, তবে সাথে সাথে ব্যায়াম থেকে সেদিনের জন্য বিরতি নিন। ইফতারের পর ১৫-২০ মিনিটের জন্য বাইরে হেঁটে আসতে পারেন।
রমজানের স্বাস্থ্যকর ডায়েট চার্ট
১. ইফতার
খেজুর : ১-২ টা
ডাবের পানি/ যেকোন ফলের শরবত। ইসুবগুলের ভুষি + চিয়াসিড/ টক দইয়ের লাচ্ছি (চিনি ছাড়া যেকোন ১টি খাবেন): ১ গ্লাস।
পেঁয়াজু/ বেগুনী/ চপ/ কাবাব : ১/২ টা।
সবজির সালাদ/অল্প ছোলা সাথে সালাদ মিক্সড/দই, চিড়া, কলা/ওটস/হালিম/স্যুপ (যে কোন একটি মেনু খাবেন): ১ কাপ।
একটি আপেল/ একটি ছোট কলা/সালাদ/যেকোন ফল: ১ কাপ।
২. রাতের খাবার
একটি রুটি/আধা কাপ ভাত/অর্ধেক পরোটা (যে কোন একটি খাবেন)।
২ টুকরো মাছ অথবা মাংস। ২টি মাছ আর ২টি মাংসের টুকরো এক সাথে খাওয়া যাবেনা।
সবজি/শাক/সালদ+লেবু: ১ কাপ।
২/৩ চা চামচ টক দই।
৩. সেহরি
অনেকেই সেহেরিতে কিছু খান না। কেউবা এক বা দুই কাপ চা খান। কিন্তু এটি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই খারাপ। আপনি সেহরিতে কম খাবেন কিন্তু নিয়ম মেনে খাবেন। যেমন –
আধা কাপ ভাত/একটি রুটি।
১ টুকরো মুরগীর মাংস।
সবজি ১ কাপ।
টক দই ১ কাপ।
যারা টক দই খেতে পারেন না তারা ১ কাপ সর ছাড়া দুধ খেতে পারেন।
চন্ডিকা রানী চৌধুরী
ফিটনেস নিউট্রিশনিস্ট
Recent Post
পিসিওএস জনিত সমস্যায় খাদ্য নির্দেশনা
- May 12, 2024
- 1 min read
ALL ABOUT SUNSCREEN AND SUNBLOCKS: HOW TO
- May 2, 2024
- 3 min read
Summer Skin Care
- April 30, 2024
- 8 min read
সন্তানের নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় সবসময় পাশে আছে
- April 30, 2024
- 1 min read
গরমে সুস্থ্যতার ডায়েট চার্ট
- April 29, 2024
- 1 min read
ঢাকা ব্যাংকের মাস্টারকার্ড ব্যবহার করে বায়োজিনের সকল
- April 29, 2024
- 0 min read
Categories
- Antiaging (6)
- Baby Care (1)
- Body Care (23)
- Breast Tightening (1)
- Customer Relationship (1)
- Dry Skin Care (1)
- Eye Care (2)
- Face Care (4)
- Food & Nutrition (21)
- Hair Care (7)
- Health and Wellness (4)
- Hyperpigmentation & Melasma Care (2)
- Lip Care (1)
- News & Events (19)
- Oily & Acne Skin Care (1)
- Skin Care (44)
- Skincare Tips (15)
- Smart Skin care & Life Style (6)
- Social (5)
- Sun Protection (5)
- Under Eye Dark Circle (1)
- Whitening & Brightening (4)
No Comments