গ্রীষ্মের তাপদাহে জনজীবন হয়ে পড়ে অস্থির। গরমের তীব্রতা বাড়ছে দিনকে দিন। গরমের অস্বস্তি থেকে বাঁচতে সবাই একটু ঠান্ডার পরশ খোঁজে। অতিরিক্ত গরমে হিটস্ট্রোক, পানি শূন্যতা, ডায়রিয়া, খাদ্যে বিষক্রিয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা হয়। তার পরও জীবিকার তাগিদে বের হতে হচ্ছে অনেককেই। গরম বাড়লেও থেমে থাকার কোনো উপায় নেই। তাই গরম থেকে কীভাবে নিজেকে একটু হলেও স্বস্তিতে রাখতে পারেন চলুন তাই জেনে নেওয়া যাক-
* গরমের সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করুন। পাশাপাশি তরল খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন। তৃষ্ণা না পেলেও প্রচুর পানি পান করুন। পানি ছাড়াও ডাব, জুস, লাচ্ছি, লেবুপানি, দই প্রভৃতি খেতে পারেন। এতে শরীর আর্দ্র থাকবে।
* গরমের সময় পানিযুক্ত তাজা দেশি ফল যেমন, তরমুজ, পেঁপে, কলা, শসা, জামরুল ইত্যাদি বেশি করে খান। কাঁচা আমের শরবত খেতে পারেন। এতে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে। পাকস্থলী সুস্থ রাখার জন্য প্রতিদিন টক দইয়ের শরবত বানিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
* এ সময় বেশি মসলাযুক্ত খাবার এবং রাস্তায় বিক্রি হওয়া খোলা খাবার, ভাজা পোড়া এড়িয়ে চলুন। চা, কফি, কোমল পানীয় খাবেন না। কারণ এসব খাবার শরীরে পানিস্বল্পতা তৈরি করে।
* আইসক্রিম ও কোমল পানীয় খেলে শরীরে ঠান্ডা অনুভূত হয় সত্যি। কিন্তু এসব খাবারে শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দেওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। তাই এসব পরিহার করাই ভালো।
* গরম এলেই রাস্তার পাশের বিভিন্ন খাবার বিশেষ করে শরবত, জুস খাওয়ার পরিমাণ বেড়ে যায়। এগুলো খাদ্যজনিত নানা রোগ যেমন-ডায়রিয়া, ফুড পয়জনিং, বমি, জন্ডিস ইত্যাদির কারণ হয়। তাই এসব এড়িয়ে চলুন।
* বাইরে বের হওয়ার সময় ছাতা বা ক্যাপ ব্যবহার করুন। সরাসরি রোদ এড়িয়ে ছায়াযুক্ত স্থান দিয়ে চলার চেষ্টা করুন। ভারি ও কালো কাপড় পরিধান থেকে বিরত থাকুন। হালকা রং ও পাতলা কাপড় পরিধান করুন।
* ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করতে সানস্ক্রিম এবং সানগ্লাস ব্যবহার করুন।
* একটানা কেউ রোদে কাজ করবেন না। কাজের মধ্যে কিছু সময় পরপর ছায়াযুক্ত জায়গায় বিশ্রাম নিতে হবে।
* খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত থাকুন।
* শরীরের তাপমাত্রা কমাতে প্রতিদিন গোসলের অভ্যাস করতে হবে।
* গরমে প্রস্রাবের রঙের দিকে খেয়াল রাখুন। প্রস্রাবের গাঢ় রং পানি স্বল্পতার লক্ষণ। দীর্ঘ সময় গরমে থাকলে স্যালাইন পান করুন।
হিটস্ট্রোক
গরমের সময়ের একটি মারাত্মক স্বাস্থ্যগত সমস্যার নাম হিট স্ট্রোক। চিকিৎসা শাস্ত্র অনুযায়ী, প্রচণ্ড গরম আবহাওয়ায় শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেলে তাকে হিট স্ট্রোক বলে। স্বাভাবিক অবস্থায় রক্ত দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে। কোনো কারণে শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে ত্বকের রক্তনালি প্রসারিত হয় এবং অতিরিক্ত তাপ পরিবেশে ছড়িয়ে দেয়। প্রয়োজনে ঘামের মাধ্যমেও শরীরের তাপ কমে যায়। কিন্তু প্রচণ্ড গরম ও আর্দ্র পরিবেশে বেশি সময় অবস্থান বা পরিশ্রম করলে তাপ নিয়ন্ত্রণ আর সম্ভব হয় না। এতে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বিপৎসীমা ছাড়িয়ে যায় এবং হিট স্ট্রোক দেখা দেয়।
এর লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে-
• শরীর অত্যধিক ক্লান্ত ও দুর্বল লাগা, মাথা ব্যথা ও অসুস্থবোধ করা, অতিরিক্ত তৃষ্ণাবোধ হওয়া।
• অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, বমি বমি ভাব হওয়া।
• শরীরের ত্বকের রং বদলে যাওয়া, ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া। অবশ্য যাদের ত্বক কালো বা বাদামি। তাদের ক্ষেত্রে চামড়ার রং বদল সাধারণত আলদাভাবে ধরা পড়ে না।
• শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হওয়া, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, অচেতন হয়ে যাওয়া।
হিটস্ট্রোক কাদের বেশি হয়?
প্রচণ্ড গরমে ও আর্দ্রতায় যে কারও হিটস্ট্রোক হতে পারে। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যেমন-
• শিশু ও বৃদ্ধদের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কম থাকায় হিট স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এ ছাড়া বয়স্ক ব্যক্তিরা যেহেতু প্রায়ই বিভিন্ন রোগে ভোগেন। কিংবা নানা ওষুধ সেবন করেন, যা হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়। শরীরে পানিস্বল্পতা হলে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।
• কিছু কিছু ওষুধ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায় বিশেষ করে প্রস্রাব বাড়ানোর ওষুধ, বিষন্নতার ওষুধ, মানসিক রোগের ওষুধ ইত্যাদি। তাই যারা এগুলো নিয়মিত সেবন করেন তাদের হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি থাকে।
• যাঁরা দিনের বেলায় প্রচণ্ড রোদে কায়িক পরিশ্রম করেন। তাঁদের হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি। যেমন- কৃষক, শ্রমিক, রিকশাচালক।
প্রতিরোধের উপায়ঃ
হিটস্ট্রোক থেকে রক্ষা পেতে প্রতিরোধের উপায়গুলো জেনে রাখা ভালো। তাহলে এই অত্যধিক তাপমাত্রায় তুলনামূলক সুস্থ থাকা যাবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস এবং ইউনিসেফ এ ক্ষেত্রে বেশ কিছু উপায় অনুসরণের পরামর্শ দেয়। উপায়গুলো হলো-
• দিনে অন্য সময়ের তুলনায় বেশি পানি পান করা। ঢিলেঢালা ও হালকা রঙের কাপড় পরিধান করা।
• দুপুরের সময়টাতে যখন সূর্যের তাপ বেশি, সে সময় খোলা আকাশের নিচে না থাকা।
• দিনের বেশির ভাগ সময় ছায়ায় বা সম্ভব হলে ঘরে থাকার চেষ্টা করা। তাপ থেকে বাঁচতে ঘরের জানালা দরজার পর্দা নামিয়ে রাখা।
• অ্যালকোহল ও ক্যাফেইন এড়িয়ে চলা। শরীরচর্চার অভ্যাস থাকলে এ সময় হালকা ব্যায়াম করা।
• ঘরে থাকার সময় সম্ভব হলে তাপ উৎপন্ন হয়-এমন ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রপাতি বন্ধ করে রাখা।
• সঙ্গে সব সময় স্যালাইন রাখা। অতিরিক্ত ঘেমে গেলে স্যালাইন পানি পান করা। ইলেকট্রোলাই ড্রিঙ্ক এ সময় ভালো কাজে দেয়।
প্রতিকারে করণীয়ঃ
✓ হিট স্ট্রোকের পূর্বলক্ষণগুলো দেখা দিলেই দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। রোগীকে অপেক্ষাকৃত শীতল কোনো স্থানে নিয়ে যেতে হবে। ভেজা কাপড় দিয়ে শরীর মুছে দিতে হবে। ফ্যান ছেড়ে দিতে হবে বা বাতাস করতে হবে। প্রচুর পানি বা খাওয়ার স্যালাইন পান করতে হবে। কাঁধে-বগলে অথবা কুঁচকিতে বরফ দেওয়া যেতে পারে। অবস্থার উন্নতি না হলে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
✓ হিট স্ট্রোকে অনেক সময় বড় ধরনের ক্ষতি, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। গরমের এই সময়টায় তাই সাবধানে থাকতে হবে। দ্রুততম সময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও হাসপাতালে ভর্তি করে সঠিক চিকিৎসা নেওয়া গেলে বেশির ভাগ রোগীই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠে।
চন্ডিকা রানী চৌধুরী
ফিটনেস নিউট্রিশনিস্ট
নারায়ণগঞ্জ ব্র্যাঞ্চ
Recent Post
পিসিওএস জনিত সমস্যায় খাদ্য নির্দেশনা
- May 12, 2024
- 1 min read
ALL ABOUT SUNSCREEN AND SUNBLOCKS: HOW TO
- May 2, 2024
- 3 min read
Summer Skin Care
- April 30, 2024
- 8 min read
সন্তানের নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় সবসময় পাশে আছে
- April 30, 2024
- 1 min read
গরমে সুস্থ্যতার ডায়েট চার্ট
- April 29, 2024
- 1 min read
ঢাকা ব্যাংকের মাস্টারকার্ড ব্যবহার করে বায়োজিনের সকল
- April 29, 2024
- 0 min read
Categories
- Antiaging (6)
- Baby Care (1)
- Body Care (23)
- Breast Tightening (1)
- Customer Relationship (1)
- Dry Skin Care (1)
- Eye Care (2)
- Face Care (4)
- Food & Nutrition (21)
- Hair Care (7)
- Health and Wellness (4)
- Hyperpigmentation & Melasma Care (2)
- Lip Care (1)
- News & Events (19)
- Oily & Acne Skin Care (1)
- Skin Care (44)
- Skincare Tips (15)
- Smart Skin care & Life Style (6)
- Social (5)
- Sun Protection (5)
- Under Eye Dark Circle (1)
- Whitening & Brightening (4)
No Comments