উচ্চতা অনুযায়ী ওজন বেশী থাকাকেই সহজ ভাষায় আমরা ওজনাধিক্য বা ওভারওয়েট বলে থাকি। সাধারণত শরীরে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত মেদ জমে গেলেই ওজনাধিক্য দেখা যায়। আমাদের শরীরে কি পরিমাণ ওজন বেশী আছে বা আমরা সঠিক ওজনে আছি কিনা এটা পরিমাপ করার জন্য রয়েছে Body Mass Index (BMI)।
এই স্কেল অনুয়ায়ী যাদের BMI রেঞ্জ ২৫ এর থেকে বেশী তাদেরকে মূলত ওভারওয়েট বলা হয়।
ওজনাধিক্য কেন হয়?
অনেক সময় দেখা যায় কেউ হয়তো স্বাভাবিক ওজনে আছে অথচ হঠাৎ করে ওজন বেড়ে গেছে। ওজন বৃদ্ধির মূল কারণ গুলো নিয়ে কিছু আলোচনা করা যাক।
★ প্রতিটা মানুষের তাদের একটিভিটি লেভেলের সাথে সামাঞ্জস্য রেখে আলাদা আলাদা ক্যালরি চাহিদা রয়েছে। যখন চাহিদার থেকে বেশী ক্যালরি গ্রহন করা হয় তখন তা শরীরে এক্সট্রা ফ্যাট হিসেবে জমা হতে থাকে। আবার ধরুন আপনি সঠিক পরিমাণ ক্যালরি গ্রহণ করছেন কিন্তু এই ক্যালরি খরচ করছেন না তখন ও ওজন বৃদ্ধি হতে পারে।
★ ওভারওয়েট অথবা ওবেসিটিতে জেনেটিক্স এর ভূমিকা রয়েছে। সাধারণত ২৫% ওবেসিটি জেনেটিকাল কারণে হয়ে থাকে। কিছু জিন আছে যা মানুষের ফুড এপেটাইট, মেটাবোলিজম, ফুড ক্রেভিং, ফ্যাট ডিস্ট্রিবিউশন এ প্রভাব বিস্তার করে থাকে। যেসব বাবা মায়েরা ওবেসিটিতে ভুগে থাকেন তাদের সন্তানদের ও ওবেসড হওয়ার সম্ভবনা বেশী থাকে।
★ ঝামেলাহীন খাবার খেতে আমরা সবাই ভালবাসি। যার ফলে দিনে দিনে আমরা প্রসেসড ফুডের দিকে খুব বেশী ঝুকে পড়ছি। প্রসেসড ফুডে স্বাদবৃদ্ধির জন্য অতিরিক্ত লবন, চিনি, টেস্টিং সল্ট ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়ে থাকে যা ওজনবৃদ্ধিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখে।
★ অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার গ্রহন করলে ওজন বৃদ্ধি হয়।
★ পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণেও ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে। যেমন – হাঁটার জন্য পার্ক না থাকা, অস্বাস্থ্যকর খাবারের সহজলভ্যতা, স্বাস্থ্যকর খাবারের মূল্য হাতের নাগালে না থাকা, জাংক ফুডের বিজ্ঞাপন ইত্যাদি।
★ ইনসুলিন রেসিস্ট্যান্স, পলি সিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম(PCOS), হাইপোথাইরয়েডিজম ইত্যাদি রোগের কারণেও ওজন বৃদ্ধি হতে পারে।
★ ঘন ঘন বেশী পরিমাণ খাবার গ্রহণ, টিভি দেখতে দেখতে খাবার গ্রহণ, অতিরিক্ত ফ্যাট ও কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার গ্রহণ করলে ওজন বৃদ্ধি হয়।
★ মানসিক চাপ, অবসাদ, মন খারাপ এগুলা দূর করার জন্য অনেকে অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ করে থাকে, যা ওজন বৃদ্ধিতে সহায়ক।
★ ব্যায়াম না করার ফলেও আমাদের শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরি জমা হয়ে ওজন বৃদ্ধি হতে পারে।
ওজনাধিক্য বা ওবেসিটির ক্ষতিকর দিক
বর্তমানে বিশ্বের ৭২% পুরুষ এবং ৬৩% নারী ওজনাধিক্যের শিকার। ওজনাধিক্যের সাথে রয়েছে অনেক রোগের যোগসূত্র। ওজনাধিক্যের ক্ষতিকর দিক সমূহ নিয়ে আলোচনা করা যাক।
উচ্চ রক্তচাপ – সাধারণত নরমাল রক্তচাপ হচ্ছে ১২০/৮০ mm/Hg। কারো সিস্টোলিক চাপ যদি ধারাবাহিক ভাবে ১৪০ বা এর থেকে বেশী এবং ডায়াস্টোলিক চাপ যদি ৯০ বা এর বেশী হয় তখন ধরে নিতে হবে উক্ত ব্যক্তির উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। শরীরে বেশী ওজন থাকার ফলে আমাদের হৃৎপিন্ডকে কোষে রক্ত পৌছানোর জন্য জোরে চাপ দিতে হয়। এখানেই ওজনাধিক্যের সাথে উচ্চ রক্তচাপের সম্পর্ক। উচ্চ রক্তচাপের কারণে হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি ফেইলিওর হতে পারে।
টাইপ ২ ডায়াবেটিস – রক্তে সুগারের মাত্রা নরমালের থেকে বৃদ্ধি পেলেই আমারা একে টাইপ ২ ডায়াবেটিস বলে থাকি। আমাদের দেশে এমন পরিবার খুঁজে পাওয়া দুষ্কর যেখানে কোন ডায়াবেটিস রোগী নেই। ফ্যামিলি হিস্টোরি এবং জেনেটিকাল কারণেই বেশীরভাগ ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস হয়ে থাকে। এছাড়াও একটিভিটি লেভেল কম হওয়া, অস্বাস্থ্যকর ডায়েট এবং ওজনাধিক্য উল্লেখযোগ্য কারণ। ধারণা করা হয় ওজনাধিক্যের ফলে আমাদের শরীরে কোষ গুলো পরিবর্তিত হয়ে যায় এবং কোষে ইনসুলিন রেসিস্ট্যান্স এর সৃষ্টি করে। এই ইনসুলিনের কাজ হচ্ছে রক্তের সুগারকে কোষে বহন করা যা আমাদের শক্তি উৎপাদন করে। যখন কোষ ইনসুলিন রেসিস্ট্যান্ট হয়ে যায় তখন এই সুগারগুলা কোষে না যেয়ে রক্তে থেকে যায়। ফলে রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যায় এবং এটাকেই ডায়াবেটিস বলা হয়ে থাকে।
হার্ট ডিজিজ এবং স্ট্রোক – স্টোকের মূল কারণ উচ্চ রক্তচাপ যা ওজনাধিক্য থেকেই সৃষ্টি হয়।
ক্যান্সার – শরীরের যেকোন অংশ যেমন কোলন, লিভার ইত্যাদির কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে ক্যান্সারের সৃষ্টি হতে পারে। ক্যান্সার কোষ পরবর্তীতে শরীরের এক অংশ থেকে অন্য অংশে ছড়িয়ে পরতে পারে। আমাদের শরীরে ফ্যাটসেল গুলো কিছু হরমোন নিঃসরণ করে যা কোষের আকৃতি বৃদ্ধি বা পরিবর্তন করার জন্য দায়ী। এই পরিবর্তন থেকে ক্যান্সারের উদ্ভব হতে পারে।
স্লিপ অ্যাপনিয়া – অনেকের ঘুমের ভিতর নাক ডাকা, ঘন ঘন ঘুম ভেঙে যাওয়া, শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। একেই স্লিপ অ্যাপনিয়া বলা হয়। ঘুমের ভেতর শ্বাস ১০সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিটের জন্য ও বন্ধ হতে পারে। স্লিপ অ্যাপনিয়ার মূল কারণ ওজনাধিক্যের ফলে মুখ গহবর ছোট হয়ে যাওয়া। স্লিপ অ্যাপনিয়ার ফলে বিভিন্ন জটিলতা এবং হঠাৎ মৃত্যুও হতে পারে।
অস্টিওআর্থাইটিস – সহজ ভাষায় হাঁড়ের জয়েন্টের ব্যথাকে অস্টিওআর্থাইটিস বলা হয়। ইঞ্জুরি, বয়স বৃদ্ধি, ফ্যামিলি হিস্টোরির সাথে সাথে ওজনাধিক্যও অস্টিওআর্থাইটিস এর গুরুত্বপূর্ণ একটি কারণ। ওজন বৃদ্ধি পেলে হাড়ের জয়েন্টে চাপ সৃষ্টি করে যা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ফ্যাটি লিভার – লিভারে ফ্যাট জমলে তাকে ফ্যাটি লিভার বলা হয়। ফ্যাটি লিভার থেকে লিভার সিরোসিস, লিভার ড্যামেজ এমনকি লিভার ফেইলিওর ও হতে পারে। ফ্যাটি লিভারের নির্দিষ্ট কোন কারণ না পাওয়া গেলেও এটি বয়স্ক, ওভারওয়েট বা ওবেসড এবং ডায়াবেটিস পেশেন্টদের মধ্যে বেশী দেখা যায়।
কিডনি ডিজিজ – ওজনাধিক্য উচ্চরক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস সৃষ্টি করে যা কিডনি ডিজিজের প্রথম কারণ। এছাড়াও শুধুমাত্র ওজনাধিক্য থেকেও কিডনি ড্যামেজ হতে পারে।
অর্থাৎ ওজনাধিক্য যেকোন রোগের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কারণ হিসেবে কাজ করে।
ওজনাধিক্য থেকে পরিত্রাণের উপায়
আমাদের অধিকাংশ মানুষেরই ওজনাধিক্যের মূল কারণ অস্বাস্থ্যকর জীবন ব্যবস্থা। ওজনাধিক্য থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার কিছু উপায় জেনে নেয়া যাক।
★ সুস্থ্য থাকার জন্য প্রতিদিন ৩০-৪৫মিনিট হাঁটা উচিৎ। ওজন কমানোর জন্য প্রতিদিন ৪৫-৬০ মিনিট দ্রুত গতিতে হাঁটা প্রয়োজন বা ৩০-৪০মিনিট ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করা যেতে পারে।
★ মিষ্টি জাতীয় খাবার প্রতিদিনের খাবার তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। এছাড়া অনেকে চা বা কফিতে এক্সট্রা চিনি ব্যবহার করে থাকে যা ওজন বৃদ্ধিতে সহায়ক। এজন্য চিনি ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হবে।
★ কর্ম ব্যস্ততা বৃদ্ধির সাথে সাথে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রসেসড ফুড গ্রহন করার মাত্রা বেড়েছে যা ওজন বৃদ্ধি করে। প্রসেসড ও জাংক ফুড খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিৎ।
★ শর্করা জাতীয় খাবার যেমন – ভাত, রুটি, আলু, চিনি ইত্যাদি কম মাত্রায় গ্রহণ করা।
★ খাদ্য তালিকায় প্রোটিন জাতীয় খাবার যেমন – ডিম, মাছ, মাংস, বাদাম ইত্যাদির পরিমাণ বৃদ্ধি করা।
★ যেসব খাবারে আঁশ আছে যেমন – আপেল, গাজর, ব্রকলি, মটরশুঁটি, ওটস, পপকর্ণ, ডার্ক চকলেট ইত্যাদি খাবার নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখা।
★ প্রতিদিনের ক্যালরী চাহিদা থেকে কম ক্যালরী গ্রহন করা।
★ দেখা যায় যারা ওজন কমাতে চান তারা প্রায়ই ক্রাশ ডায়েটিং এর দিকে ঝুঁকে পড়েন। ক্রাশ ডায়েট দ্রুত ওজন কমালেও তা অস্বাস্থ্যকর এবং দীর্ঘদিন করার ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
★ ওজন বেশী থাকার ফলে অনেকের মানসিক স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে, অবসাদেও ভুগে থাকে। এজন্য অভিজ্ঞ ডাক্তার কিংবা নিউটিশনিস্টের কাউন্সেলিং নেয়া প্রয়োজন।
পরিশেষে, সঠিক ডায়েট চার্টের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে ওজন কমানো সম্ভব। সেক্ষেত্রে একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ গ্রহন করা এবং তা সঠিকভাবে মেনে চলা উচিৎ।
Writer:
Kazi Sumaiya Bani
Fitness Nutritionist
Kazi Sumaiya Bani
Fitness NutritionistI'm Kazi Sumaiya Bani, a Fitness Nutritionist dedicated to optimizing health through personalized dietary strategies. I hold a B.Sc and M.Sc in Food & Nutrition from the University of Dhaka, complemented by specialized training in Special Clinical Nutrition from BIRDEM General Hospital, Dhaka. With over 4 years of experience, including roles at Nestle Bangladesh as a Project Nutritionist, I specialize in Diabetes management, Renal Nutrition, Child Nutrition, PCOS, Weight Management, and lifestyle modifications. My work is driven by my passion for promoting holistic well-being through nutrition, and I believe in empowering others to lead healthier lives. Connect with me to learn more about my professional journey.
Leave a Reply Cancel reply
Recent Post
Why You Should Use Centella Asiatica in
- July 18, 2024
- 3 min read
Melasma
- July 3, 2024
- 4 min read
Importance of Fitness
- June 26, 2024
- 3 min read
Achieve Radiant Skin with Expert Cosmetic Dermatology
- June 9, 2024
- 1 min read
Bio-Xin launches skincare service in Khulna
- May 26, 2024
- 1 min read
খুলনায় যাত্রা শুরু করলো বায়োজিন
- May 26, 2024
- 1 min read
Categories
- Antiaging (7)
- Baby Care (1)
- Body Care (23)
- Breast Tightening (1)
- Customer Relationship (1)
- Dry Skin Care (1)
- Eye Care (2)
- Face Care (4)
- Food & Nutrition (21)
- Hair Care (8)
- Health and Wellness (6)
- Hyperpigmentation & Melasma Care (3)
- Lip Care (1)
- News & Events (20)
- Oily & Acne Skin Care (1)
- Skin Care (46)
- Skincare Tips (15)
- Smart Skin care & Life Style (6)
- Social (5)
- Sun Protection (5)
- Under Eye Dark Circle (1)
- Whitening & Brightening (4)
2 replies on “বাড়তি ওজনের ছোট-বড় যত সমস্যা ও পরিত্রাণের উপায়”
Sylhet earput rode dupagul bazar delivery detay hobe
Sure , বিস্তারিত জানতে বা অর্ডার করতে ভিজিট করুন – https://bioxincosmeceuticals.com/, http://m.me/BioXinCosmeceuticals অথবা কল করুন 01708411487/01708411471-472