Help line 01755-660522

Search
সৌন্দর্য কেড়ে নেয় ধূমপান!

আমেরিকা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এবং প্রিভেন্টেশন এর দেয়া তথ্য অনুযায়ী, অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীদের হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং ক্যান্সার হবার ঝুঁকি থাকে শতগুণ। তবে এই কথা সর্বজনবিদিত। কেননা, ধূমপান নিয়ে চলা বিজ্ঞাপনেও এমন কথাই সচরাচর সবার চোখে পড়ে। কিন্তু আপনি জানেন কি, দিন দিন আপনার ত্বকের সৌন্দর্য কেড়ে নিচ্ছে এই বিষাক্ত জিনিসটি। ধূমপান আপনার ত্বকের রক্তের প্রবাহের মাত্রাকে সংকুচিত করে ফেলে, ত্বকের প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও অক্সিজেনকে সরবরাহে বাঁধা দেয়।

এছাড়াও, তামাকের বিষাক্ত ধোঁয়া ত্বকের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে হ্রাস করে। আর স্কিনের কোলাজেনের মাত্রাকে হ্রাস করতে মেটালোপ্রোটিনেজ নামক একটি এনজাইমকে একটিভেট করে দেয় ধূমপান। যেটা আপনার স্কিনের কোলাজেন ও ইলাস্টিনের ফাইবারগুলোকে ভেঙ্গে দেয়। যা আপনার স্কিনে বয়সের ছাপ, কুঁচকে যাওয়া ভাব এবং ত্বকের আরো নানান সমস্যা কারণ রূপে দেখা দেয়। তাহলে এটা বলা যায় যে, ত্বকের সৌন্দর্য কেড়ে নিচ্ছে ধূমপান, কিন্তু সেই সম্পর্কে আমরা কতটা সচেতন। চলুন বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক –

ধূমপানে বয়স বাড়ে

ধূমপান বার্ধক্যের প্রক্রিয়াকে আরো দ্রুততর করে তোলে। কেননা, সিগারেটের ধোঁয়া স্কিনের অক্সাডেটিভ স্ট্রেস বা ফ্রি রেডিক্যাল গঠনের অন্যতম প্রধান কারণ। যার কারণে স্কিনে কোলাজনের উৎপাদন হ্রাস পায় এবং স্কিনের কোলাজনের ও ইলাস্টিনের ফাইবার ধ্বংস করে দেয়। আর ত্বকে তারূন্য ও দৃঢ়ভাব ধরে রাখা এই কোলাজেন হারালে স্কিনে অকালেই দেখা দেয় বার্ধক্যজনিত সব লক্ষণ। এছাড়াও, ধূমপানের কারণে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মির প্রতি আরো বেশি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে ত্বক। ফলে অকালেই দেখা দেয় এজিং সাইন আর স্পটগুলো।

রিঙ্কেলস ও ফাইন লাইনস

সিগারেট ফুঁকার কারণে ত্বকে রিঙ্কেলস ও ফাইন লাইনস হবার সম্ভাবনা থাকে প্রচুর। কেননা, সিগারেটের ধোঁয়া রক্তনালীতে রক্তের প্রবাহকে সংকুচিত করে ফেলে। ফলে স্কিনের জন্য প্রয়োজনীয় রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ হতে পারে না। এই কারণেই মূলত ত্বকের নমনীয়তা হারায় এবং রিঙ্কেলস ও ফাইন লাইনস দ্রুত বিকাশ লাভ করে। সিগারেট ফুঁকার কারণে মূলত ধূমপায়ীদের মুখের চারপাশে ফাইন লাইনস বেশি দ্রুত দেখা দেয়, যেটাকে ‘স্মোকার্স লাইনস’ বলা হয়ে থাকে।

হাইপারপিগমেন্টেশন ও দাগ

ধূমপায়ীদের তুলনায় অধূমপায়ীদের স্কিন অনেক বেশি উজ্জ্বল ও স্বাস্থ্যকর থাকে। কেননা, ধূমপানের কারণে যেহেতু ত্বকের রক্তনালীতে রক্তের প্রবাহ সঠিক পরিমাণে সরবরাহ হতে পারে না; তাই ত্বকের ক্যাপিলারিস আর ভেইনগুলো আরো বেশি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। ফলে মেলানিন বেড়ে গিয়ে ত্বকে হাইপারপিগমেন্টেশনসহ নানান দাগ দেখা দিতে শুরু করে।

ঠোঁটের কালচে ভাব আর চোখের নীচের গাঢ় দাগ

অতিরিক্ত সিগারেট ফুঁকার কারণে পিগমেন্টেশন দেখা দেয় এবং ঠোঁট কালো হয়ে যেতে শুরু করে। পাশাপাশি ঠোঁটের আর্দ্রতা চলে যায় ফলে ঠোঁট হয়ে যায় রুক্ষ ও শুষ্ক। ধূমপায়ীদের ঘুমে সমস্যা দেখা দেয়। ফলে চোখের নীচে ডার্ক সার্কেল হয়। এছাড়াও, চোখে ছানি পড়াও ধূমপানের কারণেই হতে পারে।

ত্বকের ইমিউন সিস্টেম নষ্ট হয়ে যায়

আমাদের শরীরের কোথাও কেটে গেলে যেমন সেটা নিজে নিজেই সেড়ে যায় একটা সময় পরে। তেমনই ত্বকের কোথাও সমস্যা হলে সেটাও সময় নিয়ে সেড়ে উঠে। কিন্তু ধূমপায়ীদের ত্বকের ইমিউন সিস্টেম বা ন্যাচারাল ব্যারিয়ার অনেকটাই নাজুক ও দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে ত্বকের হিলিং পাওয়ার বা ক্ষত নিরাময়ের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হ্রাস পায়। এমনকি ত্বকের কাটাছেড়া তখন ইনফেকশনে রূপান্তর হতেও সময় নিবে না।

স্কিন ক্যান্সারের প্রবণতা

সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি স্কিন ক্যান্সারের কারণ, এটা সবাইই জানে। কিন্ত, অধূমপায়ীদের চাইতে ধূমপায়ীদের স্কিন ক্যান্সারের প্রবণতা থাকে আরো বেশি। কেননা, ধূমপানের কারণে ত্বক সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির প্রতি আরো বেশি সংবেদনশীল হয়ে পড়ে। ধূমপানের কারণে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি ত্বকে আরো বেশি ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। যা ত্বককে ক্যান্সারের দিকে নিয়ে যায়।

ত্বক হয়ে রুক্ষ ও শুষ্ক

ধূমপায়ীদের ত্বক সবসময়ই অতিরিক্ত রুক্ষ আর শুষ্ক দেখায়। কারণ, ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখার প্রক্রিয়াতে বাঁধা দেয় তামাক। নিকোটিন ত্বকের ময়েশ্চার ও হাইড্রেশন লেভেল থেকে প্রয়োজনীয় জল শুষে নেয়। ফলে ত্বকে ডিহাইড্রেশন দেখা দেয়ার সম্ভাবনা যায় বেড়ে।

স্ট্রেচমার্ক দেখা দিতে পারে

হঠাৎ করে ওজন বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়ার কারণে শরীরের বিভিন্ন স্থানে স্ট্রেচমার্ক দেখা দিতে পারে। তবে ধূমপানের কারণেও ত্বকের স্ট্রেচমার্ক দেখার সম্ভাবনা যায় অনেকগুণে বেড়ে। নিকোটিন ত্বকের কানেক্টিভ টিস্যু ও ফাইবারগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। ফলে ত্বক হয়ে যায় নাজুক আর নিজেকে প্রসারিত করতে ত্বক তখন স্ট্রেচমার্ক নামক সাদাটে রেখা ফেলে দেয় ত্বকে।

চুল পড়ার অন্যতম কারণ

হেয়ার ফলিকল বা চুলের গোড়া পর্যন্ত ধূমপানের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হবার অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। চুলের আগা ফেটে যাওয়া, চুলের স্বাভাবিক রঙ এবং আরো নানান ড্যামেজড ভাবের জন্য নিকোটিন অনেকাংশেই দায়ী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *